মেয়র প্রার্থী শুভ্র হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে উত্তাল গৌরীপুর : মা আর স্ত্রী’র আহাজারী থামছেই না!

প্রকাশিত: ৯:৪৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০২০

গৌরীপুর আঞ্চলিক অফিস :
ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভা নির্বাচনে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান শুভ্র’র হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে সোমবার (১৯ অক্টোবর/২০২০) দুপুরে পুরাতন সোনালী ব্যাংক কৃষ্ণচূড়া চত্বরে মানববন্ধন করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

আজ মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর/২০২০) সকাল ১১টায় উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ একই স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে।


অপরদিকে শুভ্র’র কালিপুর দৈনিক বাজারের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। মা খালেদা বেগমের হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর তার শশুড়ের বাঁধাই ছবি নিয়ে বারবার মুর্ছে যাচ্ছেন।

বলছেন, শেখ হাসিনা শুভ্রকে কোলে নিয়েছিলেন, কপালে চুমু খেয়ে বড় নেতা হবা সেই আর্শীবাদও করেছিলো। আজ আমার পুত্র কোথায়, আঁচল পেতে বারবার পুত্রকে খোঁজছেন, প্রধানমন্ত্রী’র নিকট বিচার চাইছেন, আল্লাহর নিকট পুত্রের জন্য ফরিয়াদও করছেন।

নিহতের বাবা সিদ্দিকুর রহমান যেন নির্বাক, ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন, সন্তানের ছবি দেখে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছেন। আরেক রুমে স্ত্রী তাহমিনা আক্তার চুমকী দু’দিনেও মুখে নেননি কিছু, স্বজনরা বারবার তাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছেন, কথার স্বরও যেন বদলে গেছে, স্বামীর শোকে বারবার মোর্ছা যাচ্ছেন। জ্ঞান হারাচ্ছেন।

মানববন্ধনে নিহতের চাচা আসেকুর রহমান বাচ্চু বলেন, নজরুল ইসলাম সরকার এমপি’র মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী আমাদের বাসায় এসেছিলেন, সেই দিন ছোট্ট শিশু শুভ্র’কে কোলে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে ছিলো। সেই শিশুটিকে আজ যারা নৃশৃংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারা শুধু শুভ্রকে মেরে ফেলেনি। ভাষাসৈনিক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. এম.এ সোবাহানের নাতিকে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মকেও হত্যা করা হয়েছে।

মানব বন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সঞ্চালনা করেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ সোহেল রানা।

বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ হেলাল উদ্দিন আহাম্মেদ, গৌরীপুর প্রেসকারেব সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিন্টু, নিহতের চাচা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি আশেকুর রহমান বাচ্চু, গৌরীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর মোঃ আব্দুল কাদির, গৌরীপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মোঃ সামছুল ইসলাম, উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোঃ বিল্লাল হোসেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মেহেরাব আরেফিন বাঁধন, সাবেক সভাপতি মোঃ সানাউল হক হীরা, সাবেক সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এসএম জিল্লুর রহমান, বোকাইনগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ আশরাফুল ইসলাম, কলেজ ছাত্রলীগ নেতা পাভেল রহমান প্রমুখ। এ

ছাড়াও মানব বন্ধনে অংশ নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মুন্নাফ, বোকাইনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি মোঃ হাবিব উল্লাহ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মোঃ কামাল হোসেন, পৌর কৃষকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুকুল ইসলাম ও সর্বস্তরের জনতা।
শুভ্র গৌরীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, ভাষা সৈনিক ডাঃ এম.এ সুবাহানের নাতি। কালিপুর দৈনিক বাজার এলাকার হোমিও চিকিৎসক ডাঃ সিদ্দিকুর রহমান ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খালেদা বেগমের পুত্র। দু’পুত্রের মাঝে শুভ্র ছিলো বড় সন্তান।
যেভাবে খুন হয় শুভ্র :

গৌরীপুর পৌরসভার পানমহালে পৌর মেয়র প্রার্থী হিসাবে শনিবার (১৭ অক্টোবর/২০২০) রাত ১০টার দিকে গণসংযোগ শেষে আব্দুর রহিমের দোকানে চা-চক্রে চলছিলো নির্বাচনী আলাপচারিতা। ৪টি বেঞ্চে ১১জন, ৫টি চেয়ারে ৫জন ও পাশের দোকানে ২০/২৫জন, চারপাশে শত শত লোকে-লোকারণ্য ছিলো। হাটের দিন থাকায় দোকানীর সংখ্যাও প্রায় অর্ধশত। শতাধিক বৈদ্যুতিক লাইট জ¦লছে। এমন জনাকীর্ণ স্থানে ২টি সিএনজি দিয়ে ৮/১০জন নামে। সড়ক থেকে চা দোকানের দুরত্ব প্রায় ১০ফুট। সেখানে অতর্কিত-এলোপাতাড়িভাবে হামলা চালায়। কথা বলছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী গজন্দর গ্রামের শামীম আহাম্মেদ। তিনি ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের গজন্দর গ্রামের হামিদুর রহমানের পুত্র। তিনি আরো জানান, উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১নং মইলাকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে। তিনি আরো জানান, পান মহালের আব্দুর রহিমের চায়ের দোকানে মাসুদুর রহমান শুভ্রসহ তারা ৪/৫জন চা খাচ্ছিলেন। এ সময় দু’টি সিএনজি দিয়ে ৮/১০নামে সঙ্গে রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ চেয়ারম্যানও নামে। হঠাৎ করে দু’জন তাকেও কুপ দিতে আসে। সে সরে যাওয়ায় চায়ের দোকানের খুঁটির বাঁশ কেটে গেছে। পরবর্তীতে চিৎকার দিলে এ দু’জন দৌড়ে পালিয়ে যায়। অন্যরা মাসুদুর রহমান শুভ্র’র ওপর আক্রমণ চালায়। শুভ্রকে বাঁচাতে গিয়ে গুরুত্বর আহত হন জাহাঙ্গীর ও আল আমিন। ওরা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ওইদিন রাত ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর মাসুদুর রহমান শুভ্র মারা যায়। রোববার গৌরীপুর স্টেডিয়ামে জানাযা শেষে পৌর কবরস্থানে দাফন কার্য সম্পন্ন হয়।
এদিকে রোববার রাতে বাড়িওয়ালাপাড়া খ্রিস্টানবাড়ি ঘরে হামলা-ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাদল দে’র স্ত্রী জোসনা রানী দে জানান, তার পুত্র রকি দে শুভ্র’র সমর্থক ও কর্মী। এ কারণে তার বাড়িঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, পুড়ে দেয়া হয়েছে প্রার্থনার ঘরও।
অপরদিকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় রাত ৮টা পর্যন্ত গৌরীপুর থানায় মামলা হয়নি। বিষয়টি নিশ্চিত করেন গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ বোরহান উদ্দিন। হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে আটককৃত উপজেলা বিএনপি (একাংশের) যুগ্ম আহ্বায়ক ও মইলাকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ, মইলাকান্দা ইউনিয়নের পশ্চিম কাউরাট গ্রামের চান মিয়ার পুত্র রাসেল মিয়া (৩২), ইউনুছ আলীর পুত্র জাহাঙ্গীর আলম (৩২) ও আব্দুল খালেকের পুত্র মজিবুর রহমান (৩০) পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।