ময়মনসিংহে বঙ্গবন্ধু এঁর ‘জুলিও কুরি’ শান্তিপদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপিত

প্রকাশিত: ৯:২৭ অপরাহ্ণ, মে ২৮, ২০২৩

স্টাফ রিপোর্টার : বাঙ্গালি জাতির মুক্তি আন্দোলন এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’কে শান্তিপদকে ভূষিত করা হয়। “বিশ্ব শান্তি পরিষদ” ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বঙ্গবন্ধুকে এ পদকে ভূষিত করে। পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তির ঐতিহাসিক এ দিনটিকে কেন্দ্র করে সারা দেশের মত ময়মনসিংহেও যথাযোগ্য মর্যাদায় ২৮ মে রবিবার দিনব্যাপী নানান কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালিত হয়েছে। জেলা প্রশাসন, ময়মনসিংহ এ আয়োজন করে।

এশীয় শান্তি পরিষদের উদ্যোগে ১৯৭৩ সালের মে মাসের ঐ দিন ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল এশীয় শান্তি সম্মেলন। সম্মেলনের আকাঙ্ক্ষা ছিল যুদ্ধ-দারিদ্র্য-দুর্ভিক্ষমুক্ত এশিয়া গড়া। ২৩ মে’র সম্মেলনে প্রধান আকর্ষণ ছিল বঙ্গবন্ধুকে শান্তির জন্য জুলিও কুরি শান্তিপদক প্রদান। এ পদক নোবেল শান্তি পুরস্কারের পরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবচেয়ে মর্যাদাশীল ও সম্মানিত শান্তিপদক। নিপীড়িত বাঙ্গালি জাতির মুক্তির সংগ্রামে অতুলনীয় নেতৃত্ব প্রদানের জন্য বঙ্গবন্ধুকে এশীয় শান্তি পরিষদ এ পদকে ভূষিত করেছেন। সেদিনের সে সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বের মুক্তিকামী কন্ঠস্বর একবিন্দুতে একত্রিত হয়েছিল।

শান্তি পদক প্রাপ্তির তাৎপর্য তুলে ধরে নগরীর টাউন হল প্রাঙ্গণের এড. তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে রবিবার এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাস।

প্রধান অতিথি বলেন, জাতির পিতা ছোটবেলা থেকেই শান্তির জন্য কাজ করে গেছেন। গায়ের চাদর পর্যন্ত গরীব দুঃখীকে দিয়ে দিয়েছেন। ছাত্র জীবনে বিদ্যালয়ের জন্য শিক্ষামন্ত্রীকে রাস্তায় পথ অবরুদ্ধ করে অধিকার আদায় করে নিয়েছেন। শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতন, বৈষম্যে নিরসনের জন্য বারবার পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। সে আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। শোষণ-বঞ্চনা থেকে মানুষকে মুক্তি করে তাদের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠা করার কাজ করে গেছেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৫৬ সালে বিশ্ব শান্তি পরিষদের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমরা শোষণমুক্ত একটি সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করতে চাই। যুগ যুগ ধরে সাম্রাজ্যবাদীর শোষণ হতে মুক্তি চাই।

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বক্তারা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শুধু দেশের নন, তিনি বিশ্বের। তিনি বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধুতে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক পদক লাভ করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য, জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাফিজার রহমান, পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ এহতেশামুল আলম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ, সাংবাদিকবৃন্দ ও সুশীল সমাজের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভা শেষে অতিথিবৃন্দ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকের ওপর স্মারক ডাক টিকিট ও খাম অবমুক্ত করেন এবং প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

দিবসটি পালন উপলক্ষে ময়মনসিংহের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনা সভা ও বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে চিত্রাঙ্কন, কুইজ, ‘জুলিও কুরি শান্তি পদক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ নামক বিষয়বস্তুর ওপর রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। জেলার মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, পেগোডা ও উপাসনালয়ে মোনাজাত ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।

নগরীর বিভিন্ন মোড়ে ময়মনসিংহ জেলা তথ্য অফিসের আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর ‘জুলিও কুরি’ শান্তি প্রদক প্রাপ্তির ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন ও স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলোতে দিনের বিভিন্ন সময় প্রচার করা হয়।