ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা :
করুণা মহামারীর ভয়াল থাবা আর ইউরোপের দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্ব এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ অর্থনৈতিক মন্দা ও খাদ্য সংকট মোকাবেলায় ব্যস্ত। বৈশ্বিক এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করেছেন দেশের এক ইঞ্চি মাটিও অনাবাদি রাখা যাবে না। সেই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার কৃষি অধিদপ্তর ১১ টি ইউনিয়ন ও পৌর শহরের পতিত অনাবাদি জমিতে সবজি চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করে পুষ্টিবাগান স্থাপন করেছে। দিন দিন বাড়ছে পারিবারিক পুষ্টিবাগানের সংখ্যা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান জানান, বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। এদেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা মেটাতে বর্তমান সরকারের যুগোপযোগী গৃহীত কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। বর্তমান সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এ উপজেলার পতিত জায়গায় ২০২৩/২৪ অর্থ বছরে ৩শ ১৯টি পুষ্টিবাগান করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও অর্জিত হয়েছে ৬শ ৯৪ টি। সংশ্লিষ্ট অনাবাদি জমিতে সবজি চাষ করে কৃষক ও কৃষাণীরা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন তারা। পারিবারিক পুষ্টিবাগান করার কারণে স্থানীয়ভাবে কমেছে আমদানি নির্ভরতা। শুধু গ্রামীণ জনপদের সবজি বাগান স্থাপন কর্মসূচিতে সীমাবদ্ধ না থেকে কৃষি বিভাগ এখন প্রাতিষ্ঠানিক ভাবেও পতিত জায়গায় পুষ্টিবাগান করছে।
সরেজমিন পৌর শহরের দত্তপাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকের দক্ষিণ পাশে ১৭ শতক পতিত জমিতে উপজেলার কৃষি অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস সমন্বিতভাবে গড়ে তুলেছে নান্দনিক পুষ্টি বাগান। এ বাগানে রয়েছে লাল শাক, পালং শাক, বরবটি, গিমা কলমি, আলু, পেঁয়াজ, বেগুন, ধনিয়া, ডাটা, শসা, রসুন, করলা এবং পেঁপে। ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠা পুষ্টিবাগানটি সহজেই পথিকের দৃষ্টি কাড়ে।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল খায়ের জানান, বাগানের এ জায়গাটি আগে মহাসড়কের ইট পাথর আর লতা পাতার জঙ্গল ছিল। তিনি ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে ও পরামর্শ দিয়ে সবজি চাষের উপযোগী করে দিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার দেলোয়ার হোসেন জানান, কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে পুষ্টি বাগান করার পর বাজার থেকে এখন আর কোন সবজি কিনতে হয় না। বাগান করার আগে ২৫ জন স্টাফের জন্য দৈনিক ৪শ থেকে ৫শ টাকার সবজি কিনতে হত। এখন নিজেদের চাহিদার ৯০ ভাগ পূরণ হচ্ছে এ পুষ্টি বাগান থেকে।
কৃষিবিদ নুসরাত জামান বলেন, পুষ্টিবাগান স্থাপন সহজি করণের লক্ষ্যে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে নেট, বীজ, সার ও প্রয়োজনীয় কৃষি যন্ত্রপাতি দিয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত কৃষি অফিসার আব্দুল ওয়াহেদ খান জানান, পুষ্টিবাগানের সবজিগুলো সম্পূর্ণ বিষমুক্ত। জৈব সার দিয়ে উৎপাদন করা হয়। তাই সবজিগুলো হয় সুস্থ সবল ও সুস্বাদু। পতিত জায়গায় পুষ্টিবাগান করায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ প্রান্তিক পর্যায়ে বাড়ছে আর্থিক স্বনির্ভরতা।