দুর্গাপুরে সোমেশ্বরী ও নেতাই নদীর তীব্র ভাঙনের আতঙ্কে ১৫ গ্রামের বসতি

প্রকাশিত: ১:৩০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০

কলিহাসান,দুর্গাপুর(নেত্রকোনা)প্রতিনিধি
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে সোমশে^রী নদীতে বেরিবাঁধ না থাকায় একের পর এক তীব্র ভাঙন আতংকে দিনাতিপাত করছে উপজেলার সিমান্তবর্তী কুল্লাগড়া ইউনিয়নের বড়ইকান্দি,ভূলিপাড়া,কামারখালী,রানীখং,বিজয়পুর, পৌরসভার কুল্লাগড়া,শিবগঞ্জ বাজার, ডাকুমারা,দক্ষিণ ভবানীপুর সহ প্রায় ৯ গ্রামের মানুষ।

অন্যদিকে নেতাই নদীর ভাঙনে গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের বন্দউষান গ্রামের অসংখ্য বসতি সহ বন্দউষান বাজার, মাদ্রাসা,মসজিদ,কবরস্থান নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকার বন্দউষান,ভাদুয়া, সহ ৬টি গ্রামের মানুষ চরম আতঙ্কে দিন কাটছে।
সোমেশ^রী ও নেতাই নদীর অবাধ ভাঙনে বিলীন হতে চলেছে ওইসব এলাকার অসংখ্য স্থাপনা, প্রতিষ্ঠান। এর সাথে সাথে রয়েছে কবরস্থান। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে সর্বহারা অবস্থায় দিন পার করছে বেশক’টি পরিবার। তৃতীয় ধাপে বন্যা হওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে মসজিদ, মন্দিরসহ, বিদ্যালয়, ঐহিত্যবাহী রানীখং ধর্মপল্লী। ভাঙন রোধে স্থানীয়রা নিজ অর্থায়নে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ দেয়ার চেস্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ৩য় বারের মতো সোমেশ^রী নদীতে বন্যার পানি আসায় গাঁওকান্দিয়া, কাকৈরগড়া,বাকলজোড়া,কুল্লাগড়া, চন্ডিগর ইউনিয়ন এলাকার নিম্নাঞ্চল এলাকা গুলো প্লাবিত হয়েছে। ঘরবন্দি দিন কাটছে অনেকের। বন্যার পানিতে জবু-তবু কৃষকের আমন ফসলি জমি। গো-খাদ্যের দেখা দিয়েছে চরম সংকট। নদী ভাঙনের ফলে স্থানীয়দের অনেকে অন্যত্র পাড়ি দিচ্ছেন। ভাঙন রোধে ২০১০ সালে ডাকুমারা এলাকার কিছু অংশে স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় ছিলো অনেক কম। আর সেই সব কাজের মান নিয়ে নানা মহলে দেখা গেছে নানা প্রশ্ন।

বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন (বাগাছাস) কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক নেতা রংচি রেমা বালুর বস্তা ফেলার বিষয়ে বলেন, আমার বলার ভাষা নাই প্রশাসনের এই বিমাতা সুলভ আচরণ দেখে। আমরা এ দেশের নাগরিক কিনা, ঘৃনা হচ্ছে নিজের প্রতি। আমরা নিরুপায় হয়ে হোস্টেলের টাকা, কেউ বা টিফিনের টাকা থেকে অর্থ সংগ্রহ করে আজকে ৪ শত বালুর বন্তা ফেলেছি। প্রশাসনের কাছে নদী ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।

স্থানীয় বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক জানান, নদীর দুই পাড়ে স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণের দাবীতে বেশ কয়েকবার মানববন্ধন করেছি, প্রশাসনের উর্দ্ধতন মহল থেকে সরেজমিনে তদন্তও করে গেছেন বেশ কয়েকবার, এখন পর্যন্ত কোন স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। নদীতে ৩য় বারের মতো পানি হওয়ায় এবং নৌকায় বাংলা ড্রেজার বসিয়ে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে নদীর দুই পাড়ে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। কবে ভাঙন রোধ হবে,জীবিত থাকতেই এ বাঁধ দেখে যেতে পারবো কি?

নেতাই নদীর তীব্র ভাঙন নিয়ে গাঁওকান্দিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব মতিন প্রতিবেদককে বলেন, কালিকাবর, বন্দউষান এলাকার বেরীবাঁধ দ্রুত নির্মিত না হলে বহু মানুষের ঘর-বাড়ি বিলীনের শঙ্কা রয়েছে। অনেকের বাড়ি নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে।

নেতাই নদীর ভাঙন নিয়ে সংশ্লিস্ট ইউপি মেম্বার শাহজাহান মিয়া বলেন, আমি কান্ত হয়ে পড়ছি চিটি চালাচালিতে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বেশক’টি প্রতিষ্টান যেমন মসজিদ,মাদ্রাসা,বন্দউষান বাজার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকের ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যের জায়গায় ঘর বেঁধে দিন কাটছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আমাদের বাঁচান,নদী ভাঙনের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুণ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা জেলার উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান প্রতিবেদককে বলেন, অল্প দিনের ব্যবধানে অত্র এলাকায় পর পর বন্যা হওয়ায় পানির চাপে বেশ কিছু এলাকা ভেঙে গেছে। ইতিমধ্যে অত্র এলাকায় স্থায়ীবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।

এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা খানম প্রতিবেদককে বলেন, সোমেশ্বরী নদীর ভাঙন ঠেকাতে ইতোমধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসক স্যার সহ পানি উন্নয়ন রোর্ডের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ নিয়ে স্থানীয় বাঁধ নির্মাণের বড় প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বৃষ্টিপাত কমলেই বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।