দেশের ৯ম ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জি.আই) হিসেবে স্বীকৃতি পেলো ধোবাউড়ার ভেদিকুড়া এবং দূর্গাপুরের সাদামাটি

প্রকাশিত: ৬:০৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৮, ২০২১

জালাল উদ্দিন সোহাগ :
বাংলাদেশের ৯ম ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জি.আই) হিসেবে স্বীকৃতি পেলো ধোবাউড়ার উপজেলার ভেদিকুড়া এবং দূর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুর এবং আশেপাশের সাদামাটি। জি.আই এর অভিব্যক্তি Geographical Indication বাংলায় যাকে আমরা ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য বলে থাকি যা একটি নির্দিষ্ট পণ্যের জন্যে ব্যবহার করা হয়।

কোনো একটি দেশের নির্দিষ্ট অঞ্চল বা শহরের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা এবং সেখানকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি যদি কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ঐ অঞ্চলের পরিচিতি বহন করে তাহলে সেটিকে সেই দেশের (অঞ্চল বা শহরের) জিআই পণ্য হিসেবে World Intellectual Property Organisation (WIPO) এর মাধ্যমে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

দেশের নিজস্ব পণ্য গুলোকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যে বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের (ডিপিডিটি) উদ্যোগে ২০১৬ সাল থেকে জিআই অন্তর্ভুক্তির কাজ শুরু করেছেন।

সর্বশেষ আয়োজিত ‘জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে মেধাসম্পদ’ শীর্ষক সেমিনার এবং ‘বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস-২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাতে জিআই সনদ হস্তান্তর করা হয়। নেত্রকোনা জেলার অন্তর্ভুক্ত দূর্গাপুর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত বিজয়পুর এবং ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার অন্তর্ভুক্ত ভেদিকুড়া, গাছুয়াপাড়া ও মাইজপাড়া চিনামাটির (সাদামাটি) এই প্রাকৃতিক সম্পদটিকে জিআই স্বীকৃতি দিতে নিবন্ধনের আবেদন করেছিল নেত্রকোনা জেলা প্রশাসনের কার্যালয়। যা ২০২১ সালে এসে স্বীকৃতি পায়।

সিরামিকের তৈজসপত্র, টাইলস, গ্লাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার হচ্ছে এই উৎকৃষ্ট মানের সাদামাটি। এই মাটির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি প্রাকৃতিক-ভাবেই কেওলিন বা অ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ মাটি। সিলিকা বালিসহ আরও অনেক খনিজ পদার্থ থাকার কারনে স্থান ভেদে মাটি বৈশিষ্ট্য ও মান ও রং ভিন্ন ভিন্ন হয়।

কালো, ধূসর ও লাল রঙের এই মাটি শুকনো অবস্থায় মধ্যম মাত্রার শক্ত ও ভঙ্গুর হয়। কিন্তু ভেজা অবস্থায় এই মাটি বেশ মসৃণ, নরম ও আঠালো। বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর ১৯৫৭ সালে তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার ভেদিকুড়া নামক স্থানে প্রথম সাদামাটির সন্ধান পাওয়া যায়। মোট ১৬৩টি সাদামাটির টিলা রয়েছে যার মোট মজুদের পরিমান ছিলো প্রায় ১৯ লাখ মেট্রিক টন। সত্তরের দশক থেকে সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ৫ লাখ মেট্রিক টন মাটি উত্তোলন করা হয়েছে।

৯ টি কূপ থেকে মাটি উত্তোলন চলমান রয়েছে এদিকে সাদামাটি জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় স্থানীয় অধিবাসীরা খুবই আনন্দিত। জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা, অনিয়ন্ত্রিতভাবে মাটি উত্তোলন বন্ধ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আরো সোচ্চার হবেন।