হাওর জনপদের উন্নয়নে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন

প্রকাশিত: ৬:৪৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২০

হাওরে ফুটছে পদ্ম, ছড়াচ্ছে সুবাস অবিরাম

মো. আবুল কালাম আজাদ :

‘শোন শোন হাওরবাসী শুনো দিয়া মন, সাজ্জাদুল হাসানের স্বপ্নের কথা করিব বর্ণন।’ লিখার শিরোনামটা এমনতর হতে পারতো।

কিন্তু তা না করে সরলপ্রাণ হাওরবাসীকে সরাসরি পুরো লিখাটি আগ্রহ নিয়ে পড়বার স্পৃহা সৃষ্টি করার লক্ষে এমনতর শিরোনাম করা হয়েছে। এবং আমার লিখার শুরুতেই পালাগান-জারিগান অথবা কিচ্চার বন্ধনাগীতের ঢঙটা রেখে দিয়েছি।

পৃথিবীর সকল সফল এবং বিফল ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে মানুষ! নব নব সভ্যতার গোঁড়া পত্তন করেছে সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ জাত এই মানুষ! পবিত্র কালামে পাকে সৃষ্টিকুলের অধিকর্তা কর্তৃক বিবৃত বাণীর বাঙলা তরজমায় অর্থ দাঁড়ায় ‘আলাহ ততণ কারও ভাগ্য পরিবর্তন করেননা, যতণ না তারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে সচেষ্ট হয়। ’ হিন্দু ধর্মের শাস্ত্র পরিচয় ঋগ্বেদে (৬/৭৫/৯) বলা আছে ‘সমাজকে ভালবাস, ুধার্তকে অন্ন দাও, দুর্গতকে সাহায্য কর, সমাজকে বদলে দাও এবং সত্য-ন্যায় আর সমাজ পরিবর্তনের সংগ্রামে ভূমিকা রাখার শক্তি-সাহস অর্জন কর।’

হ্যাঁ পাঠক, আমি বয়ান করছিলাম আউলা-ঝাউলা-বাউলার দেশ তথা হাওর জনপদের ভাগ্য পরিবর্তনের কিচ্চার বন্ধনাগীত। আর কিতাবে যেসকল কাহিনী সংলাপ বিবৃত রয়েছে, বিবৃত রয়েছে যেসকল মহানায়কের ইতিহাস আর সভ্যতা পরিবর্তনের কিচ্চা সাজ্জাদুল হাসান তাদের একজন।

হয়তোবা জীবদ্দশায় রচিত হবেনা তার কীর্তি কাহিনীর পালা, কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম কিচ্চা আর পালাগানে রোদন করবে হাওর জনপদের আলোকবর্তিকা সাজ্জাদুল হাসানের কীর্তি।

প্রসঙ্গক্রমে মহাত্বা গান্ধীর উক্তিটি প্রনিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, ‘নেতৃত্ব মানেই হচ্ছে অন্যদের জীবনকে সুন্দর করার সুবর্ণ সুযোগ, এটা নিজের লালসা পূরণ করার সুযোগ নয়।

’ আর সাজ্জাদুল হাসান মহাত্বা গান্ধীর বিবৃত সেই নেতৃত্ব যিনি নিজের স্বার্থকে বিবেচনায় না নিয়ে একটি জনপদকে ইতিবাচক আর ঈর্ষনীয় পরিবর্তনের নেশায় পাগলপ্রায়।

পাঠককুল নিশ্চয় জ্ঞাত রয়েছে যে, নেত্রকোনা জেলায় প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসানের উদ্যোগে জেলার শিা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, পর্যটন ও কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন েেত্র এসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশিষ্ট জেলা নির্বাহী জানিয়েছেন, নেত্রকোনার উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আগামী বছরের মধ্যেই এ দপ্তরের প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ হবে।

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী আব্দুর রহমান জানান, নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলসহ জেলার উন্নয়নে গৃহীত প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, হাওরের ফসল রা বাঁধ, সংস্কৃতি ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৃহীত প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এর মধ্যে ৬ শত ৩৭ কোটি ৪০ লাখ টাকার প্রকল্প শেখ হাসিনা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এ লক্ষে ৫ শত একর ভ’মি অধিগ্রহণের কাজ প্রায় শেষের দিকে।

নেত্রকোনা মেডিক্যাল কলেজ ভবন ও আবাসনের জন্য ৫০ একর ভ’মি অধিগ্রহণ এবং শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে ২ শত ৫০ শয্যা হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

এছাড়া ২ শত ৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নেত্রকোনার চলিশা বাগরা-মেদনী- রাজুর বাজার সংযোগ সড়ক, ৩ শত ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্যামগঞ্জ-বিরিশিরি সড়ক, ৩ শত ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঠাকুরাকোনা-কলমাকান্দা সড়ক, ১ শত ০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ-নেত্রকোনা মহাসড়ক প্রশস্তকরণ, ২ শত ৮২ কোটি ব্যয়ে মহেষখলা-কলমাকান্দা-দুর্গাপুর সীমান্ত সড়ক ও ২৭ টি ব্রীজ নির্মাণ, ২ শত ৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে নেত্রকোনা-বিশিউড়া সড়ক, ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে মদন-খালিয়াজুরি সাব-মারজেবল সড়ক এবং ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নেত্রকোনা-হোগলা বাজার সড়কের কাজ চলমান আছে।

সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বেগবান করা হাওরের রাজধানী খ্যাত মোহনগঞ্জ উপজেলাকে দৃষ্টিনন্দন নান্দনিক উপজেলা হিসেবে রুপান্তরিত করতে ৩৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে শৈলজারঞ্জন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ এবং ২৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে শিয়ালজানি খাল খনন ও সৌন্দর্য বর্ধন প্রকল্পের কাজ রয়েছে শেষ পর্যায়ে।

৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কংশ নদ খনন, মোহনগঞ্জ-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চালু, ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিঙ্গাপোতা হাওরে ফসল রা হাইজদা বাঁধ নির্মাণ, ৯ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে আদর্শ নগর পর্যটন কেন্দ্র বাস্তবায়ন, মোহনগঞ্জ পৌরসভাকে দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীতকরণ ও ৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে মোহনগঞ্জ ট্রাক স্ট্যান্ড এবং পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা অপসারণ ব্যবস্থাসহ ৭২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে মোহনগঞ্জ পৌরসভার উন্নয়ন, ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সাপমারা খাল খনন, আদর্শনগরে শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয় স্থাপন।

উপজেলা পর্যায়ে প্রথম মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ডাবল শিফট চালুকরণ, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নতুন ইন্দোনেশিয়াণ আরামদায়ক কোচ চালু, ৪৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ডিঙ্গাপোতা হাওরের অভ্যন্তরে খাল পুনঃখনন ও ফসল পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাউল সাধক উকিল মুন্সী স্মৃতি কেন্দ্র, নেত্রকোনা জেলা প্রেসকাবের বহুতল ভবন, মোহনগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমপেক্স নির্মাণ। তাছাড়া বিভিন্ন রাস্তা, শিা প্রতিষ্ঠানসহ অসংখ্য প্রকল্পের বাস্তবায়ন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব সাজ্জাদুল হাসান জানান, নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি হাওর পাড়ের কৃষক শ্রমিক জনতা তথা সকল পর্যায়ের সাধারণের ভাগ্য উন্নয়নে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি নেত্রকোনার উন্নয়নে প্রকল্পগুলো অনুমোদন দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। শেষ করব মিসাইলম্যান খ্যাত বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব এ পি জে আব্দুল কালাম‘র বাণী দিয়ে। তিনি বলেছেন, ‘স্বপ্ন সেটি নয় যা মানুষ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখে; স্বপ্ন সেইটি যা মানুষকে ঘুমোতে দেয়না।’ তরজমা দাঁড়ায় এই যে, সাজ্জাদুল হাসান এ পি জে আব্দুল কালাম‘র বিবৃত সেই মহানায়ক যিনি স্বপ্নে বিভোর থাকেন এবং স্বপ্ন দেখে দেখে না ঘুমোতেই স্বস্থি বোধ করেন।

যা তাঁকে এই গল্পের লেখক স্বপ্নপোকো খেতাবে ভূষিত করেছে। অতএব সাজ্জাদুল হাসান টমাস আলভা এডিসনের সেই ব্যক্তিত্ব ‘তিনি সবকিছুই অর্জন করতে পারেন যিনি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাজ করে যেতে পারেন অবিরাম।’ জয়তু সাজ্জাদুল হাসান।