ত্রিশালে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হামলার অভিযোগ

প্রকাশিত: ৩:৪৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২১

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা ও হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাদীপক্ষ জমি সংক্রান্ত বিরোধকে নিষ্পত্তির জন্য আদালতের শরনাপন্ন হলেও প্রতিপক্ষ বাদীপক্ষের বিরুদ্ধে একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা করেই যাচ্ছে। দুইপক্ষের দ্বন্ধে এলাকার গুটি কয়েক দালাল ফায়দা হাসিলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। উত্তেজনা সৃষ্টি করছে উভয়পক্ষের মধ্যে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ত্রিশালের বইলর ইউনিয়নের ভরাডোবা গ্রামে।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, ত্রিশাল উপজেলার বৈলর মৌজার সিএস এর ৪৮ নং খতিয়ানের মালিক আইনুল্লাহ সরকারের নিকট থেকে ১৯২৭ সালের ১০ ডিসেম্বর সম্পাদিত ও তার তিনদিন পর (১৩ ডিসেম্বর-১৯২৭) রেজিস্ট্রিকৃত ৩৬৭৫ নং এওয়াজ পত্রের দলিলমূলে সিএস ২১১০ দাগের ৬৮ শতাংশ জমি সাইন উল্লাহ মন্ডল প্রাপ্ত হইয়া ভোগদখলে থাকাকালে তার দুই পুত্র ওয়াহেদ মন্ডল ও আলাউদ্দিন মন্ডল সহ দুইকন্যা আরজান নেছা ও তহুরুন নেছাকে বিদ্যমান রেখে মৃত্যুবরণ করেন।


এওয়াজনামা দলিলমূলে ২১১০নং দাগ হতে প্রাপ্ত ৬৮ শতাংশ এবং ওই একই দাগে পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত ৬৪ শতাংশ জমি সহ ১৩২ শতাংশ জমি সাইন উল্লাহ মন্ডলের ওয়ারিশগন ভোগদখলে থাকাকালে আরওআর এর ১১৯৩ নং খতিয়ানে ২১১০ দাগসহ ১ একর ৩২ শতাংশ জমি সহ অন্যান্যদের মিলে ১০ একর ৪৫ শতাংশ জমি রেকর্ডভুক্ত হয়। ঘরোয়া বন্টনে সাইন উল্লাহ মন্ডলের ১৩২ শতাংশ জমির মধ্যে তার ছেলে ওয়াহেদ আলী মন্ডল ৬৬ শতাংশ ও আলাউদ্দিন মন্ডলও ৬৬ শতাংশ জমি প্রাপ্ত হন। আলাউদ্দিন মন্ডল ৬৬ শতাংশ জমি থেকে সাফকাওলা দলিলমূলে ৩০ শতাংশ জমি তার ভাতিজা জাহেদ আলী মন্ডলের কাছে বিক্রি করেন।

নিঃসন্তান আলাউদ্দিন মন্ডলের মৃত্যুর পর ওয়াহেদ আলী মন্ডল ও তার ওয়ারিশগন বাকি সম্পত্তির মালিক হন। এতে ওয়াহেদ আলী মন্ডলের ছেলে জাহেদ আলী মন্ডলের নামে ৯৪ শতাংশ ও মোমেন আলী মন্ডলের নামে থাকা ৩৪ শতাংশ জমি ভোগদখল করতে ছিলেন। দীর্ঘদিন তাদেরই ভোগদখলের থাকার পরও বিআরএস রেকর্ডে অন্যদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়।

এরপর সাইন উল্লাহ মন্ডলের উত্তরাধিকারী অংশীদাররা জমি সংক্রান্ত বিরোধকে নিষ্পত্তির জন্য আইনী প্রক্রিয়ায় আদালতের শরনাপন্ন হন। বিআরএস রেকর্ড ভঙ্গের জন্য ২০১৪ সালের ১৯ আগস্ট ল্যান্ডসার্ভের ট্রাইব্রুনালে মামলা করেন। তার পরদিনই (২০১৪ সালের ২০ আগস্ট) প্রতিপক্ষ বাদীপক্ষের বিরুদ্ধে ত্রিশাল সহকারী জর্জ আদালতে মামলা করেন। সেই থেকেই শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্ধ। হোসেন আলী মন্ডলের বংশধর আজিজ মাস্টার গংরা প্রতিপক্ষ জাহেদ আলী মন্ডলের বংশধরদেরকে ঘায়েল করতে তার পরিবারের সদস্যদের নামে ফৌজদারী, চাঁদাবাজীসহ একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা দিয়েই যাচ্ছে। জমি হাতিয়ে নিতে বিভিন্নভাবে হুমকি-দামকিসহ এ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ৫টি।

শুধু মামলা দিয়েই ক্ষান্ত হননি চক্রান্তকারীরা। ওই জমিতে তাদের অংশীদারিত্ব না থাকলেও গত ৩ ফেব্রুয়ারি দিনদুপুরে হোসেন আলী মন্ডলের বংশধর আজিজ মাস্টার গংরা সংঘবদ্ধ হয়ে জাহেদ আলী মন্ডলের বংশধর মোহাম্মদ আলী গংদের পুকুরের মাছ লুট, বসতবাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও তাদের মারধর করেন। হামলায় আহত হন মোহাম্মদ আলী, জোবেদা খাতুন ও আবু রায়হান। পরে ৯৯৯ ফোন দিলে ঘটনাস্থলে যান ত্রিশাল থানা পুলিশ। ওইদিন বিকেলে আহত মোহাম্মদ আলীর ছেলে বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে ত্রিশাল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।

এদিকে দুইপক্ষের দ্বন্ধে আশরাফুল ইসলাম বাদল, হামিদুল ইসলাম বজলু ও জহিরুল হক মিন্টু নামে স্থানীয় দালাল ফায়দা হাসিলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। উত্তেজনা সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছে উভয়পক্ষের মধ্যে। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, এতে যেকোন সময় ঘটতে পারে প্রাণহানীর মত ঘটনা।

মোবাইল ফোনের পুকুরের মাছ লুট, বসতবাড়িতে হামলার ভিডিও ফুটেজ হাতে পেয়ে বিষয়টি জানতে চাইলে আজিজ মাস্টারের বড়ভাই মোখলেছুর রহমান প্রতিপক্ষের পুকুরের মাছ লুট, বসতবাড়িতে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি আরো জানান, ওই জমির সিএস, আরওআর এবং বিআরএস তাদের নামেই।