দুর্গাপুরে কুঁপরি ঘরে অনাহারে দিন কাটছে স্বামী পরিত্যক্তা বাসন্তী রানী’র সংসার

প্রকাশিত: ৮:৪৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ৭, ২০২১

কলিহাসান,দুর্গাপুর(নেত্রকোনা) প্রতিনিধি:
নেত্রকোণার দুর্গাপুর পৌরসদরের শিবগঞ্জ বাজারস্থ নদীর পাশে অন্যের দেড় শতক জমির উপর নির্মিত কুঁপরি ঘরে অনাহারে কখনো অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন স্বামী পরিত্যক্তা বাসন্তী রানী দাস (৬২)। শিবগঞ্জ বাজার এলাকার শীতেশ চন্দ্র দাসের স্ত্রী বাসন্তী রানী দাস। ছয় বছর পূর্বে তাঁকে রেখে শীতেশ অন্যত্র বিয়ে করে পৌরসভার আবাসন এলাকায় সংসার করছেন বলেও তিনি জানান। গতকাল শনিবার (০৫ মার্চ) বিকেলে সরেজমিন ঘুরে এমন করুণ চিত্র দেখা গেছে।

এক পোয়া চাল রান্না করে সংসারের চার সদস্য মিলে বেশিরভাগ সময়ে খাবার খেয়ে থাকেন বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন অসহায় এ ভুক্তভোগীর পরিবার। সংসারের টানাফোঁড়ন আর অর্থের অভাবের প্রাপ্ত বয়সী মেয়ে পুতুলি রানী দাসকে (২৭) বিয়ে দিতে পারছেন না বলেও তিনি জানান। পেটে ভাত জুটছে না,আমাকে বিয়ে দিবে কিভাবে একথা বলে কান্না করে দেন পুতুলি রানী দাস ও অপর বোন পূর্নিমা রানী দাস(১৬)। জেএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর অর্থের অভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি পূর্নিমা রানী।

স্বামী পরিত্যক্তা বাসন্তী রানী দাস এ প্রতিবেদককে জানান, প্রাপ্ত বয়স্ক দুই মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে একত্রে বসবাস করছেন এ সংগ্রামী নারী। তাঁর চার মেয়ে ও তিন ছেলে রয়েছে। দুজন মেয়েকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। আর তিন ছেলের মধ্যে মেঝো ছেলে তাপস চন্দ্র শীল (২০) পাঁচ বছর পূর্বে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করে। সে মুসলিম মেয়ে বিয়ে করে পাশ^বর্তী গ্রাম খুঁজিউড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন। রাজীব চন্দ্র দাস(২২),সাগর চন্দ্র দাস(১৪) ও দুই মেয়েকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন যাপন করছেন বাসন্তী রানী দাস। রাজীব টেলা গাড়ি চালায়। গাড়ি চালালে কোনদিন ২শ টাকা আনতে পারে। প্রায় সময়ই সে অশুস্থ থাকে। ছোট ছেলে সাগর চন্দ্র শীল ট্রাকের হেলপার হিসেবে কাজ করে। সে বাড়িতে মাথা গোঁজার জায়গা নেই, ফলে দিনের পর দিন বাড়িতে না এসে ট্রাকেই ঘুমায়। প্রতি সপ্তাহে দুই-তিনশ টাকা পাঠায়। আর আমি অন্যের বাড়িতে কাজ করি, অনেকে কাজ দিতে চায়না। অল্প খেয়ে জীবন পার করছেন জীবন সংগ্রামী এ বাসন্তী রানীর দাসের সংসার। বন্যার মৌসুমে অনেকের বাড়িতে খাবার দিলেও আমগ্যোর খাবারও দেয়নি বলে জানান পূর্নিমা দাস।

স্থানীয় সদ্য নির্বাচিত কাউন্সিলর আব্দুর রাশিদ জানান, আমি ইতিমধ্যে বাসন্তীর আইডি কার্ড সংগ্রহ করেছি। তাঁকে সরকারী পৌরসভার তহবিল থেকে সহায়তা করার চেস্টা করছি।

এ বিষয়ে পৌর মেয়র মো. আলা উদ্দিন প্রতিবেদককে জানান, আমি কেবল পৌরসভার মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছি। তবে ওই পরিবারটি অনাহারে জীবন যাপন করছে আমি আপনাদেও মাধ্যমেই শুনেছি। আমি সব ধরণের সহযোগিতা করবো এ পরিবারটিকে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীবুল আহসান প্রতিবেদককে জানান, দরিদ্র পরিবারটির খোঁজ নিবো। সরকারী প্রকল্পের আওতায় এনে সর্বাত্বক সহযোগিতা করা হবে।