খাল ও কালভার্ট বন্ধ করে মাছের ঘের বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কৃষকরা

প্রকাশিত: ৭:২১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০২১

মতিউর রহমান সেলিম, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :

বিত্তশালী আর অধিক মুনাফা লোভীদের কবলে পড়েছেন কৃষকরা। টাকার লোভ দেখিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে বছর চুক্তি কৃষিজমি লিজ নিয়ে খনন করা হচ্ছে ফিসারি। ত্রিশালের কানিহারী ইউনিয়নের এলংজানী গ্রামের গুজাপুরী খাল দখল ও খালের কালভার্ট বন্ধ করে মাছের ঘের (ফিসারি) খনন করার অভিযোগ উঠেছে দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এতে এ বছর প্রায় দেড়শ একর বোরো ধানের ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা। তাদের দাবি এব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে প্রশাসন।


উপজেলার কানিহারী ইউনিয়নের এলংজানী গ্রামের পশ্চিমপাড়ার কয়েকশ একর এলাকা জুড়ে গুজাপুরী ও ভলি বিল। দুই বিলের মাঝে পানি নিষ্কাশনের জন্য রয়েছে একটি খাল। বিশেষ করে বর্ষাকালে ওই খাল দিয়েই কয়েকটি গ্রামের পানি প্রবাহিত হয় পাগারিয়া নদীতে। ওই খালের ওপর দিয়ে ত্রিশাল-কানিহারী সড়কের জামতলা মোড় থেকে এলংজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ হয়ে রামপুর ইউনিয়নের কাজীরকান্দা সড়কের হাজীর মোড়ের সংযোগ সড়ক।

সেই গ্রামীণ সড়কে নির্মিত কালভার্ট ও খালের দুইপাশ বন্ধ করে ৩০ একরের অধিক ফসলি জমি নিয়ে খনন করা হয়েছে দুটি বিশাল মাছের ঘের।


তিনবছর আগে খালের একপাশ বন্ধ করে প্রায় ১৫ একর ফসলি জমি নিয়ে মাছের ঘের করেন ত্রিশাল পৌরশহরের বাসিন্দা ব্যবসায়ি ফরিদুল ইসলাম মৃধা। এ বছর আরো প্রায় ১৫/২০ একর ফসলি জমি নিয়ে খালের অপরপাশে মাছের ঘের করেছেন ইউপি সদস্য আহমদ আলী ওরফে বুলু মেম্বার। দুই প্রভাবশালী খাল ও খালের ওপর নির্মিত কালভার্ট বন্ধ করে মাছের ঘের করার ফলে এবছর প্রায় দেড়শ একর বোরো ধানের ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

সরেজমিন দেখা যায়, গুজাপুরী ও ভলি বিলের মাঝে পানি নিষ্কাশনে রয়েছে একটি খাল। ওই খালের ওপর একটি সংযোগ সড়কে নির্মিত কালভার্ট ও খালের দুইপাশ বন্ধ করে ৩০ একরের অধিক ফসলি জমিতে খনন করা হয়েছে দুটি মাছের ঘের। ঘের দুটির পশ্চিমপাশে প্রায় দেড়শ একর ফসলি জমিতে বোরোর আবাদ করেছেন কৃষকরা। উজানের পানি নিষ্কাশনে কোন ব্যবস্থা রাখেনি ফিসারি মালিকরা। তবে নামকাওয়াস্তে ছোট্র একটি ড্রেন রেখেছেন তারা। কেটে ফেলা গ্রামীণ সড়কে চলাচলের জন্য মাত্র দুটি বাঁশ ফেলে রাখা হয়েছে। ঝুঁকি নিয়েই খাল পার হচ্ছেন স্থানীয়রা।

সত্তুর বছর বয়সি রহমত আলীসহ স্থানীয় সিরাজুল, আজিমুদ্দিন, কামাল জানান, রাস্তা কেটে ফেলায় চলাচলে খুব সমস্যা। স্কুল খোলা হলে এলংজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়–য়া ছেলেমেয়েরা কিভাবে চলাচল করবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। এক সপ্তাহের মধ্যে ফিসারির পাশদিয়ে পানি নিষ্কাশনের খাল ও কালভার্ট নির্মানের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কয়েকবার।

স্থানীয় কৃষক শরাফ উদ্দিন, নুরুজ্জামান, শাহাবুদ্দিন, সুরুজ আলী, সুলতানসহ অন্যরা জানান, খাল ও খালের ওপর নির্মিত কালভার্ট বন্ধ করে ফিসারি খননের ফলে এবছর আমাদের প্রায় দেড়শ একর বোরো ধানের ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমাদের দাবি এব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন প্রশাসন।

ইউপি সদস্য আহমদ আলী ওরফে বুলু মেম্বার ও ব্যবসায়ি ফরিদ বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে পানি নিষ্কাশনের খাল ও কালভার্ট নির্মাণ করে দেবো।

ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফ আলী উজ্জল বলেন, কৃষিজমিতে ফিসারি ও জলাবন্ধতা সৃষ্টি হয়ে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কায় তাদেরকে ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়নি।

এব্যাপারে ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফিসারি মালিকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।