৪র্থ শ্রেণির ছাত্রীকে যৌন হয়রানি : গৌরীপুরে সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ

প্রকাশিত: ৭:৩৪ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৭, ২০২১

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ
ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনিত স্কুলছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তদন্ত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করেছে উপজেলা শিক্ষা কমিটি।

এছাড়াও ব্যক্তিগত কোচিংয়ে পড়তে শিক্ষার্থীকে বাধ্য করা, কোন কারণে কোচিং না করলে শিক্ষার্থীদের সাথে বিরূপ আচরণ এবং ফলাফলে প্রভাব বিস্তার, কোচিংয়ে পড়ানোর নামে একাধিক ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক আচরণে কয়েকজন শিক্ষার্থীর স্কুল ত্যাগ ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাও তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে শিক্ষা কমিটি।

রোববার (৭ নভেম্বর/২০২১) বিকালে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন খানের কার্যালয়ে আয়োজিত শিক্ষা কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত শেষে এই সুপারিশ করা হয়। শিক্ষা কমিটির ওই সভায় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছাড়াও ইউএনও হাসান মারুফ, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন, শিক্ষা কমিটির সদস্য আমজাদ হোসেন, বীরমুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন, আম্বিয়া আক্তারসহ সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন খান বলেন এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উঠা যৌন হয়রানির অভিযোগের ঘটনা নিয়ে আমরা বিব্রত। ইউএনও হাসান মারুফ বলেন এর আগেও শিক্ষক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে এই ধরণের একাধিক অভিযোগ ছিল। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো অধিকতর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন বলেন শিক্ষা কমিটির চিঠি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে। কর্র্তৃপক্ষ অধিকতর তদন্ত করে প্রয়োনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এদিকে আলোচিত এ শিক্ষক ১৪দিনের ছুটি চেয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট আবেদন করেছেন। শিক্ষা অফিসার মনিকা পারভীন জানান, আবেদনের বিষয়টি উধ্বর্তন কর্তৃক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত হয়নি।

এর আগে (৩১ অক্টোবর) গত রোববার সকালে পৌর শহরের শহীদ মঞ্জু সড়ক এলাকায় মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের বাসায় প্রাইভেট পড়তে গিয়ে ওই স্কুলছাত্রী যৌন নিপীড়নের শিকার হন। পরে ওইদিন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বাবা বিচার চেয়ে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়াও এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৩মার্চ তারিখে এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির বিচার চেয়ে নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান রাবেয়া ইসলাম ডলি অভিযোগ দায়ের করেন। ওই বছরের ১২ মে তারিখে এ বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির মেধাবী শিক্ষার্থীকে তার অভিভাবক অন্য স্কুলে নিয়ে যেতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেন। সেই আবেদনে অভিভাবক উল্লেখ করেন ‘আমার মেয়ে গৌরীপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম এর ব্যক্তিগত কোচিংয়ে পড়তো।

কোচিংয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে আমার মেয়েকে এ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাতে অপারগতা প্রকাশ করছি।’ সেই বছর এ বিদ্যালয়ে আরো একাধিক শিক্ষার্থী এ শিক্ষকের যৌন হয়রানির কারণে বিদ্যালয় ত্যাগ করতে ছাড়পত্র নিতে চাইলে ম্যানেজিং কমিটি বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন। তবে এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাহমিনা খাতুন স্বাক্ষরিত ১২ মে তারিখে দেয়া ১৫৩৪নং স্মারকের পত্রে ছাড়পত্র দেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দেন। অভিভাবককে ছাড়পত্র দিয়ে শিক্ষার্থীকে অন্য বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে অনুমতি দিলেও বারবার নৈতিকস্খলনের জন্য আলোচিত এ শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এ দপ্তর।