গৌরীপুরে শুভ্র হত্যাকান্ডে রিয়াদ চেয়ারম্যানসহ গ্রেফতার-৪ : জানাযায় হত্যাকারীর ক্রসফায়ারের দাবি

অগ্নিসংযোগ-ভাংচুর বিক্ষোভে উত্তাল গৌরীপুর

প্রকাশিত: ৮:৩২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৮, ২০২০

গৌরীপুর আঞ্চলিক অফিস :
শুভ্র’র হত্যাকান্ডে জড়িত মইলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ অর্ধশত মামলার আসামী উল্লেখ করে তাকে ক্রসফায়ারের দেয়ার জোর দাবী জানান ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান খোকন।

তিনি আরো বলেন, হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু’র আদর্শের সৈনিকরা ঘরে ফিরবে না। আজকে ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ভালুকা, ঈশ্বরগঞ্জ, তারাকান্দা, নান্দাইলসহ পুরো জেলাজুড়ে আন্দোলনে নেমেছে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা।

যতদিন পর্যন্ত শুভ্র’র হত্যাকারীদের বিচার না হবে ততদিন আন্দোলন চলবে। শুভ্র’র জানাযাপূর্ব বক্তৃতায় গৌরীপুর পৌর ঈদগাহে এসব কথা বলেন। তার এ বক্তব্যকে হাজার হাজার জনতা হাত নাড়িয়ে সমর্থন যোগান। হত্যাকান্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের আশ্বাস দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ।


ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভার পানমহালে গণসংযোগকালে শনিবার (১৭ অক্টোবর/২০২০) সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন মাসুদুর রহমান শুভ্র।

তিনি উপজেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিআরডিবি’র চেয়ারম্যান। হামলায় গুরুত্বর আহত অপর দু’জন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মইলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপি’র (একাংশের) যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াদুজ্জামান রিয়াদকে রোববার ভোরে তারাকান্দা উপজেলার হারিগাছা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে গৌরীপুর থানার পুলিশ।

এছাড়াও মইলাকান্দার কাউরাট এলাকা থেকে জাহাঙ্গীর আলম, রাসেলসহ ৪জনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ বোরহান উদ্দিন।

উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মোফাজ্জল হোসেন খান জানান, শুভ্র গৌরীপুর পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী ছিলো। তার ব্যাপক জনপ্রিয়তায় ঈর্ষানীত হয়েই এ হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক মুর্শেদুজ্জামান সেলিম জানান, দলের ভিতরে আসা নব্য আওয়ামী লীগের ইন্ধনে তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।

হত্যাকান্ডে জড়িতদের ফাাঁসির দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি এক পর্যায়ে গৌরীপুর থানা ঘেরাও করে হত্যাকারীদের বিচারের দাবি জানায়।

বিক্ষুব্দ জনতা গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের নিজ বাসাবাড়ি, ব্যবসার প্রতিষ্ঠান, তার ভাই সৈয়দ তৌফিকুল ইসলামের বাড়ি, মেয়রের ছোট ভাই সৈয়দ মাজহারুল ইসলাম জুয়েলের ফার্ণিচারের দোকান, উপজেলা বিএনপির একাংশের আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ ও তার ভাই মইলাকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ ও তাদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে অভিযোগ সংযোগ, ভাংচুর করেছে।

হামলাকারীরা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোঃ রফিকুল ইসলাম ও প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন চন্দনের বাসা-বাড়িতেও হামলা ও ভাংচুর চালায়। এছাড়াও শহরের সিনেমা হল সড়ক ও পান মহালের কয়েকটি দোকানপাট ভাংচুর হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আহমার উজ্জামান, গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাখের হোসেন সিদ্দিকী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের গজন্দর গ্রামের হামিদুর রহমানের পুত্র শামীম আহাম্মেদ (৩৭) জানান, রাত ১০দিকে উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১নং মইলাকান্দা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রিয়াদুজ্জামান রিয়াদের নেতৃত্বে এ হামলা হয়েছে। তিনি আরো জানান, পান মহালের আব্দুর রহিমের চায়ের দোকানে মাসুদুর রহমান শুভ্রসহ তারা ৪/৫জন চা খাচ্ছিলেন। এ সময় দু’টি সিএনজি দিয়ে ৮/১০নামে সঙ্গে রিয়াদুজ্জামান রিয়াদ চেয়ারম্যানও নামে।

হঠাৎ করে দু’জন তাকেও কুপ দিতে আসে। সে সরে যাওয়ায় চায়ের দোকানের খুঁটির বাঁশ কেটে গেছে। পরবর্তীতে চিৎকার দিলে এ দু’জন দৌড়ে পালিয়ে যায়। অন্যরা মাসুদুর রহমান শুভ্র’র ওপর আক্রমণ চালায়। শুভ্র বাঁচার জন্য দৌড়ে মসল্লা মহালের সুমিত্রা মেডিকেল হলের সামনে যেতেই এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। শুভ্র’র সঙ্গে থাকা আল আমিন ও জাহাঙ্গীরকেও কুপিয়ে গুরুত্বর জখম করে।

আহত ৩জনের অবস্থায় আশংকাজনক বলে জানিয়ে ছিলো গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ডাঃ দীপঙ্কর চক্রবর্তী।

সুমিত্রা মেডিকেল হলের মালিক নৃপেন্দ্র চন্দ্র বিশ্বাস জানান, শুভ্রকে তাড়া করে দু’দিক থেকে ৩জন আসে। শুভ্র দোকানে এসে পড়ে যায়। আশপাশের লোকজন বেঞ্চ দিয়ে ফেরানোর চেষ্টা করে।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাত ১২টার দিকে মারা যান মাসুদুর রহমান শুভ্র। রাত দেড়টার দিকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ অশেষ চন্দ্র রায় মৃত্যুর নিশ্চিত করেন। গৌরীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ বোরহান উদ্দিন জানান, আহতদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাসুদুর রহমান শুভ্র মৃত্যুবরণ করেছে।
দুপুর ২টার দিকে লাশ গৌরীপুরে পৌঁছলে হৃদয় বিদারক দৃশ্যে রূপ নেয়। মাসুদুর রহমান শুভ্রকে প্রায় অর্ধলাখ মানুষের চোখের পানিতে চিরবিদায় জানালো। এক নজর দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে তার বাড়িতে। মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্দ নেতাকর্মীরা শহরে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে সারা শহরে র‌্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জানাযার নামাজ ও দাফন ঃ গৌরীপুর পৌর ঈদগাহ মাঠে বিকাল ৫টায় জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় অর্ধলাখ মুসুল্লীর আগমন ঘটে। ঈদগাহ মাঠে স্থান সংকলন না হওয়ায় স্টেডিয়াম মাঠেও মুসুল্লীদের দাঁড়াতে হয়। জানাযার নামাজে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনতা অংশ নেন। জানাযার নামাজে ইমামতি করেন নিহত শুভ্র’র ছোট ভাই মোঃ আবেদুর রহমান বাবু। জানাযা শেষে ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের বায়ড়াউড়া নিজ গ্রামের পারিবারিক করবস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
জানাযার নামাজে হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক একেএম আব্দুর রফিক, সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফ হাসান অনু, কেন্দ্রীয় আ’লীগের উপকমিটির সাবেক সহ সম্পাদক মুর্শেদুজ্জামান সেলিম, উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মোফাজ্জল হোসেন খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডাঃ হেলাল উদ্দিন আহাম্মেদ, যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেন জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল মুন্নাফ, জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুজ্জামান খোকন, সাধারণ সম্পাদক উত্তম চক্রবর্তী রকেট, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ সানাউল হক, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোঃ সোহেল রানা, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান তাপস, পরিবারের পক্ষ থেকে নিহতের চাচা সাদেকুর রহমান সেলিম, খলিলুর রহমান প্রমুখ।