নরওয়েতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মৌসুমী’র ঈর্ষণীয় সাফল্য

প্রকাশিত: ২:৩৬ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৮, ২০২০

ক্যান্সার ও মেটাবলিক অসুখ প্রতিরোধে অবদান রাখতে চান হানান আশরাফি (মৌসুমী)

মো. আবুল কালাম আজাদ :
নরওয়ের বারগেন ইউনিভার্সিটিতে একাডেমীক সাফল্য এবং গবেষণার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী হানান আশরাফি (মৌসুমী) ইনস্টিটিটিউট অব বায়োমেডিসিন থেকে পিএইচডি ফেলোশিপ পেয়েছেন।

হানান আশরাফি (মৌসুমী) পিএইচডি চলাকালীন বিপাক ক্রিয়ার আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, এনএডি এবং এনএডিএজেস, মানবদেহের শক্তি উৎপাদনে এদের ভূমিকা এবং কোষের মাইটোকন্ড্রিয়াতে এদের অসামাঞ্জস্য উপস্থিতি কিভাবে পার্কিনসন বা আলজেইমার এর স্নায়ুতন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করে সেই বিষয়ে গবেষণা করবেন।

হানান আশরাফি (মৌসুমী) তাঁর সাফল্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমার এই অর্জন আর সাফল্যের পেছনে আমার পিতামাতার অবদান এবং ভূমিকা অনেক অনেক। এইজন্য আমি মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়াসহ আমার বাবা-মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ।

একইসাথে তিনি তাঁর শ্বশুর-শাশুড়ি এবং স্বামীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, মেটাবলিক ডিজিজ নিয়ে অনেক বেশি দূর যেতে চান এবং জীবনে একজন বড় গবেষক হতে চান যা মানুষের কল্যাণে কাজ করবার অনেক বেশি সুযোগ তৈরি করবে।

হানান আশরাফি (মৌসুমী) বলেন, আমি ডক্টরেট পরবর্তী জীবন গবেষণা নিয়েই থাকতে চাই, ছোটবেলা থেকে নিজেকে একজন বড় রিসার্চার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার স্বপ্ন দেখেছি, জীনগত ত্রুটি সংশোধনের মাধ্যমে আমি ক্যান্সার ও মেটাবলিক অসুখ প্রতিরোধে অবদান রাখতে চাই।

হানান আশরাফি (মৌসুমী) ১৯৯২ সালে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা আব্দুল হাশিম তালুকদার উপজেলার সেরা বিদ্যাপীঠ বারহাট্টা সি কে পি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন সুনামের সাথে শিক্ষকতা করেছেন। উপজেলার সজ্জন ও সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে জনাব হাশিমের পরিচিতি রয়েছে। তাঁর মাতা বেগম সুফিয়া আক্তার শোভা একজন সুগৃহিণী।

হানান আশরাফি (মৌসুমী) ২০০৭ সালে উপজেলার বারহাট্টা সি কে পি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক পাস করেন।

২০০৯ সালে শহিদ বীর উত্তম আনোয়ার গার্লস কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীায় উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং উভয় পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ অর্জন করেছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে ২০১৫ সালে স্নাতক ও ২০১৬ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার অধ্যায়িত বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন শেষ করে একইবছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে তার পঠিত বিষয়ে অধিকতর গবেষণা করার দৃঢ় ইচ্ছা থেকে স্বামীসহ নরওয়ে পাড়ি জমান। নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অব বারগেন থেকে তিনি প্রথমেই বায়োমেডিক্যাল বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি মাস্টার্স থিসিস প্রজেক্টে মেটাবোলিজম নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁর গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল মানবদেহের বিপাক ক্রিয়ার সাথে জড়িত জীনগত ত্রুটি খুঁজে বের করা। যে ত্রুটির কারণে বিপাক প্রক্রিয়ায় অসামাঞ্জস্য দেখা যায় যা পরবর্তীতে ক্যান্সার বা অন্যান্য আরও অসুখে পরিণত হয়। মাস্টার্স চলাকালীন সময়ে তাঁর এই বিষয়ে আন্তর্জাতিক জার্নালে দুটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।

প্রবাসে সন্তানের এমন ঈর্ষণীয় সাফল্যে খুবই উচ্ছ্বসিত হানান আশরাফি (মৌসুমী) ‘র পরিবার। তাঁর বাবা-মা চাইছেন হানান আশরাফি গবেষণা কাজে সফলতা নিশ্চিত করে মানুষের কল্যাণে তার নিজেকে উৎসর্গ করবে, প্রবাসে বাংলাদেশের জন্য সুনাম কুড়িয়ে আনবে।

তাঁর বাবা আব্দুল হাশিম তালুকদার সন্তানের সাফল্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমার প্রত্যাশা ছিল উচ্চ মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে আমার মেয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশুনা করে এম বি বি এস ডিগ্রি অর্জন করবে এবং চিকিৎসক হয়ে সেবায় মনোনিবেশ করবে। কিন্তু চিকিৎসায় তাঁর আগ্রহ না থাকায় বাবা হিসেবে আমি তার ইচ্ছার প্রতি মনোযোগ দিই। তিনি বলেন, আমি চাই সে তার পথচলায় সাফল্যের উচ্চ শিখরে আরোহণ করে মানুষের কল্যাণে তার নিজেকে সমর্পণ করুক। তার মা সুফিয়া আক্তার শোভা মেয়ের সাফল্যে আনন্দিত হয়ে আরও আরও সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে প্রবাসে যেন দেশের সুনাম বাড়িয়ে তুলতে পারে সেজন্য সকলের কাছে সন্তানের জন্য দোয়া চেয়েছেন।

হানান আশরাফি (মৌসুমী) তাঁর স্বামী ও নয়মাস বয়সী এক ছেলে শিশু সন্তান নিয়ে নরওয়েতে বসবাস করছেন। তাঁর স্বামী মুনতাকা ইশতিয়াক সিরাজী একই বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি তার উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন এবং পরিবার সহ প্রবাসে সুখে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করতে পারেন সেইজন্য সকলের নিকট আশীর্বাদ প্রত্যাশা করেন।

ছয় ভাইবোনের মধ্যে হানান আশরাফি (মৌসুমী) চতুর্থ। তাঁর ছোট বোন জেরিন তাসনিয়া চৈতী শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (বগুড়া) থেকে ২০১৯ এম বি বি এস পাস করে একই প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্ন হিসেবে পড়াশুনা করছে এবং একমাত্র ভ্রাতা ফাহিম ফিরোজ আল জামি খুলনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক¤িপউটার সায়েন্স থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে একটি বেসরকারি সফটওয়্যার কো¤পানিতে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছে।