শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নান্দাইল আঞ্চলিক অফিস :
টানা ছয় বছর ধরে শিকলবন্ধি রফিকুল ইসলাম। নিরুপায় হয়ে মা বাবা তার পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছেন। এভাবেই কাটছে ৪৫ বছর বয়সি রফিকুলের দিনরাত।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নান্দাইলের কানুরামপুর-বালিপাড়া সড়কের পাশে স্থানীয় মধুপুর হাই স্কুলের জায়গায় পুকুরের পাড়ে একটি গাছের সাথে অনুমান ১২ হাত লম্বা শিকল দিয়ে রফিকুলের পা বাঁধা।
রফিকুলের মা হালিমা খাতুন জানান, প্রায় ৬ বছর আগে তার ছেলে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা করিয়েও কোনো ফল হয়নি। যাকে পায় তাকেই আঘাত করে। ৩ বার মায়ের মাথা ফাটিয়েছে, মারধরও করেছে। বাদ যায়নি প্রতিবেশিরাও।
তার নানা রকম তাণ্ডবে মানুষজন অতিষ্ঠ। ফলে নিরাপত্তার জন্য তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। মানসিক ভারসাম্য হারানোর আগে সংসার করে রফিকুল। দুই পুত্র সন্তান রয়েছে তার।
এরমধ্যে মারধর করায় তার স্ত্রী নাজমা আক্তার সংসার ছেড়ে চলে গেছে। রফিকুলের পিতা আমির আলী বলেন, “তার চিকিৎসা করাতে গিয়ে আজ বসত-ভিটে, সহায়-সম্বল হারিয়ে আজ নিঃস্ব আমি। স্থানীয় মধুপুর হাইস্কুলের পাশে ছোট দুচালা ঘর তুলে মানবেতর জীবন যাপন করছি।
পেটের তাগিদে মধুপুর বাজারে যানজট নিরসনে দিন-রাত কাজ করে যা টাকা পাই তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে।”
এখন ছেলের চিকিৎসা করান কিনা জানতে চাইলে আমির আলী বলেন, ঠিক মতো খেতেই পাই না, ছেলের চিকিৎসা করাবো কি করে ! রফিকুলকে মাটির তৈরি একটি ঘরে আলাদা রাখা হয়।
শিকল পরা অবস্থায় সে খাবার খায়, গোসল করে, টয়লেটও করতে হয়। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার সময়ও তার পায়ে শিকল থাকে। তার মা বাবার কথা, ছেলের এই অমানবিক, করুণ দশা আর সহ্য হয় না। সন্তানের সুষ্ঠু চিকিৎসার জন্য দানশীল মানুষের কাছে মানবিক সহায়তা চান অসহায় এই পিতা মাতা।