বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের সর্ববৃহৎ ভাষ্কর্য্য গৌরীপুরে

প্রকাশিত: ৬:৪৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ৬, ২০২১

গৌরীপুর (ময়মনসিং) প্রতিনিধি :
৭মার্চের ভাষণ এ যেন গণমানুষের মুক্তির কবিতা। এ প্রসঙ্গে গ্রেট ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীথ বলেছেন,‘পৃথিবীর ইতিহাসে যতদিন পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম থাকবে, ততদিন শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণটি মুক্তিকামী মানুষের মনে চির জাগরুক থাকবে। এ ভাষণ শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা।’

মুজিববর্ষ উপলক্ষে মুক্তিকামী মানুষের অনুপ্রেরণা জোগাবে গৌরীপুরের বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য্য জানালেন মুক্তিযোদ্ধা রতন সরকার।
অগ্নিঝরা ৭ মার্চ। ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো, ইনশাল্লাহ।’ ঐতিহাসিক এ ভাষণেই আজকের এই দিনে জাতিকে দেখালো নুতন পথ। তাইতো কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রো বলেছিলেন, ‘৭ মার্চের শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুধুমাত্র ভাষণ নয়, এটি একটি অনন্য রণকৌশলের দলিল।’

ঐতিহাসিক পটভূমিতে বঙ্গবন্ধু, তার আদলেই প্রায় ৭০লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৫৩ফুট উঁচু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষ্কর্য্য ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের কলতাপাড়ায় নির্মিত হয়েছে। যা প্রায় ৬তলা ভবনের সম উঁচু। শিল্পী এম.এ মাসুদ জানান, ১৮ ফুট দৈর্ঘ্যে আর ৯ফুট উঁচু ভিতের উপরে রয়েছে ৪৪ ইঞ্চির দ্বিতীয় স্তর। এই দ্বিতীয় স্তরে বঙ্গবন্ধুর পা স্পর্শ করে উপরে তাকালে দেখা যায় এক আকাশচুম্বী বঙ্গবন্ধু। মনে হয়, এখানে দাঁড়িয়ে আজও বঙ্গবন্ধু বলছেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা।

প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মরহুম ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এম.পি’র নিজস্ব অর্থায়নে ৭মাসের অকান্ত পরিশ্রমে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন শিল্পী এম.এ মাসুদ। তিনি আরও জানান, নির্মাণ শিল্পে ব্যবহার করা হয়েছে মোজাইক পাথর আর সাদা সিমেন্ট। কালো পাথর, সাদা সিমেন্ট, এ্যাকরামিন ও ক্যাঙ্গারু রঙের মিশ্রণে তৈরি করা হয়েছে মুজিব কোট। ভাষ্কর্য্যরে ব্যসার্ধ ২১ফুট।

এশিয়া মহাদেশের মাঝে এ ভাষ্কর্য্যই বৃহৎ উল্লেখ করেন প্রয়াত সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির এমপি। ভিতের দ্বিতীয় স্তরে চৌকোটায় থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি আর জনমতের ভিত্তিতে আরও ৩জন বিশিষ্ট ব্যক্তির ছবিও স্থাপানের স্থান রয়েছে। ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিব প্রয়াত হওয়ায় সেই ছবি স্থাপন আজও সম্পন্ন হয়নি। ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশের ভ্রমণ পিপাসু মানুষের মনে জাগরণ তৈরি করেছে এ স্থাপত্য শিল্প। উদ্যোক্তা ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু’র প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা ডিজিটাল দুনিয়ায় নুতন প্রেরণা জাগিয়েছে।এখন শুধু প্রয়োজন ভাষ্কর্য্যরে স্থায়ীত্বের রূপায়ন।
এ ভাষ্কর্য্যরে নিচে তাকালে দেখা যাবে উন্নয়নের মাতা শেখ হাসিনা ছবি গ্যালারী। যেখানে দুলর্ভ ১৪২টি ছবি স্থান পেয়েছে। মাতৃস্নেস্হে বঙ্গবন্ধু আর পিতৃস্নেহ্নে শেখ হাসিনার ছবিও পর্যটকদের মন ভরে দিবে। পুরো পরিবারের ছবিটি দর্শককে নিয়ে যাবে ৭১’র পরবর্তী প্রতিটি ঘটনা প্রবাহে। ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিববিহীন গ্যালারীর নেই কোন যত্ন, অবহেলা অযত্নে নষ্ট হচ্ছে ছবিও।

উত্তাল মার্চে বঙ্গবন্ধু’র ঐতিহাসিক ছবি নতুন প্রজন্মকে নিয়ে যাবে ৭ই মার্চে। যে ভাষণ সম্পর্কে বিবিসি-১৯৭১ প্রচার করে ‘পৃথিবীর ইতিহাসে জন আব্রাহাম লিংকনের গেটিস বার্গ ভাষণের সঙ্গে তুলনীয় এই ভাষণটি। যেখানে তিনি একাধারে বিপ্লবী ও রাষ্ট্রনায়ক।’ থমসন রয়টার্সকে বলেন, ১৯৭১-বিশ্বের ইতিহাসে এ রকম আর একটি পরিকল্পিত এবং বিন্যন্ত ভাষণ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে একই সংগে বিপ্লবের রূপরেখা দেয়া হয়েছে এবং সাথে সাথে দেশ পরিচালনার দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়েছে।’

হ্যাঁ, ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর ‘মেমোরী অব দ্য’ ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার’ এ অন্তর্ভূক্তি হয়েছে। ৭মার্চের মর্মবাণীর কথা ও তার প্রেরণা যুগান্তকাল প্রজন্মান্তর পৌঁছে দেয়ার লক্ষেই দেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষ্কর্য্য নির্মিত হয়েছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। লাখো পথচারী ও পর্যটককে স্মরণ করিয়ে দিবে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক সেই ভাষণের কথা। বজ্রধ্বনিতে ১৮মিনিটে কী পেয়েছিল এ জাতি? যার প্রেক্ষিতেই ৭১’র ১৬ ডিসেম্বর পেলো লাল-সবুজ খচিত পতাকা আর স্বাধীন ভূ-খন্ড।
আজকের এই দিনে বঙ্গবন্ধুর এ ভাষ্কর্য্য নুতন প্রজন্মকে জানিয়ে দিবে জাতির জনকের ৭মার্চের ভাষণের তাৎপর্য। তবে প্রয়াত ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিব অবর্তমানে এসব ভাষ্কর্য্য অযতœ-অবহেলায় রয়েছে। স্থায়ীভাবে রক্ষণাবেক্ষণের আজও নির্ধারিত নেই কোন কমিটি বা প্রশাসনিক উদ্যোগে।

ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবের স্বপ্ন ছিলো-এ ভাষ্কর্য্য উদ্বোধন করবেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। মুজিব চলে যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু’র ভাষ্কর্য্যরে সৌন্দর্য্যবর্ধন, রক্ষণাবেক্ষনেও দলীয়ভাবে অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। তবে মুজিবের এ উদ্যোগ আজ ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশেষ করে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর ‘মেমোরী অব দ্য’ ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার’ এ অন্তর্ভূক্তিতে এ ভাষ্কর্য্যরে গুরুত্ব বহুগুণে বেড়ে গেছে। গৌরীপুর পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ শফিকুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশে হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাষ্কর্য্য তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে। দর্শনার্থীদেরও যাতায়তে সুবিধা।