দুর্গাপুরে বক্স কালভার্ট নির্মাণ,উদ্বোধনের এক বছরেই ধস ও জনভোগান্তি চরমে!

প্রকাশিত: ১১:০৫ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩০, ২০২১

কলিহাসান,দুর্গাপুর(নেত্রকোনা) থেকে:
নেত্রকোণার দুর্গাপুরে গোদারিয়া হতে জয়নগর বাজারের পূর্ব গোদারিয়া গাঁওয়া খালের উপর নির্মিত বক্স কালভার্টটি ব্যবহারের এক বছরেই দেবে গেছে অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল সোমবার (২৯ মার্চ) বিকেলে উপজেলার কাকৈরগড়া ইউনিয়নের পূর্ব গোদারিয়া গ্রামের গাঁওয়া খালের উপর নির্মিত ধসে যাওয়ার এ বক্স কালভার্টটির এ চিত্র দেখা যায়। শুষ্ক মৌসুমেও জনভোগান্তি অতি চরমে। বর্ষায় ওই এলাকার মানুষ অনেকটাই ঘর বন্দি দিন খাটান বলে জানান অসংখ্য স্থানীয় ভুক্তভোগী।

ওই গাঁওয়া খালে নির্মিত ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যর বক্স কালভার্টটি এলাকার বসতিদের জন্য এখন অভিশাপ হয়ে আছে। মোটা অংকের টাকা খরচ করে নির্মিত কালভার্টটি কোনো কাজেই আসছে না অভিযোগ স্থানীয় ভুক্তভোগীদের। সরকারের অর্থ অপচয় ও নিন্মমানের সামগ্রী দিয়ে বক্স কালভার্ট নির্মাণের ফলেই এক বছরের মাথায় ব্রিজটি ধসে গেছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

২০১৫-২০১৬খ্রি.অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সেতু/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৬৫,৮৯,১০৬,০০ টাকা ব্যয়ে এ বক্স কালভার্টটি নির্মাণ করে। এর নির্মাণ কাজ প্রায় ১ বছরের বেশি সময় লেগে যায়। নির্মাণ সম্পন্ন হলেও উদ্বোধনের অপক্ষোয় ছিলো আরো দীর্ঘ সময়। গত বছরের বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানির প্রবল শ্রোতে কালভার্টটির নিছ থেকে মাটি সড়ে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে নিছ দিকে ব্রীজটি দেবে যায়। ব্রিজের সংযোগ অংশটি ব্রীজ থেকে বিছিন্ন হয়ে যায়। এ খালের উপর পুণরায় সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে,পূর্বকান্দা,সাংসা,মাদুরপাড়,জয়নগর,রামপুর,আমগড়া,বায়রাউড়া,পূর্ববিলাশপুর,শালুয়াকান্দা, মঙ্গলবাড়িয়া, গোদারিয়া, উত্তর কুলঞ্চা, পুকুরিয়াকান্দা,রোহানীকান্দা, বেতাডি, ঝানজাইল এলাকার মানুষকে।

গোদারিয়া ও বন্দসাংসা এলাকার কয়েক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এ গ্রামে ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব শিা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৭’শ বেশি হাজার শিার্থী লেখাপড়া করে। সপ্তাহে দুদিন ঝানজাইল বাজারে যাওয়ার জন্য তিন থেকে চারহাজার লোকজন যাতায়াত করেন। কৃষিকাজে ব্যবহৃত সার, কীটনাশক, বীজ, ডিজেল, কোরোসিন সেচযন্ত্র ও নিত্য ব্যবহার্য নানা জিনিসপত্র এ পথে আনা-নেওয়া করা হয়। অন্যদিকে কৃষকের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণের জন্য ধান, চাল, পাট, গম, তীল, সরিষা, সব্জি এ পথেই হাট-বাজারে নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি লাল চাঁন তালুকদার জানান, আসলে আমরা খুবই দূর্ভাগা। অনেক দৌঁড়ঝাঁপ পেড়িয়ে ওই কালভার্ট বক্সটি বরাদ্দ করিয়েছিলাম। এক বছর ব্যবহার না হতেই ধসে গেলো। দীর্ঘ ব্রীজের স্থলে বক্স কালভার্ট নির্মাণ কোন ভাবেই কাম্য নয়। যথাযথ কর্তৃপক্ষের উচিত সরেজমিন তদন্ত করে ধসে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা। পুণরায় জনগনের দূর্ভোগ লাগবে ব্রীজ নির্মাণ করা জরুরী।

ওই সেতু নির্মাণ কাজের সাব-ঠিকাদার মো.সাইফুল ইসলাম বলেন, এ বক্স কালভার্টটির টেন্ডার পান বি.কম ফার্মা’র সত্বাধীকারী পাভেল চৌধুরী সুমন। উনার ওই কাজটি আমি সাব ঠিকাদার হিসেবে সম্পন্ন করি। ফাইলিং ব্রিজের স্থলে বক্স কালভার্ট নির্মাণ কোনভাবেই ঠিক হয়নি। ব্রীজের স্থলটি ছিল অনেক গভীর। তৎকালীন স্থানীয় সাংসদ ছবি বিশ^াস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। কেননা এ ব্রীজটির নিচ দিয়ে প্রচন্ড গতিতে পানি প্রবাহিত হওয়ার ফলে দুই পাশের গাইডওয়াল ভেঙে যায়। ব্রীজটি মাঝ অংশটি দেবে গেছে।

বিষয়টি তাৎক্ষণিত তখনকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা খানমকে অবগত করানো হয়। এখানে ফাইলিং ব্রীজ নির্মাণের জন্য কাগজপত্র জমা দেওয়া আছে বলেও তিনি জানান।

এ বিষয়ে ওই বক্স কালভার্ট নির্মাণ কাজের তৎকালীন সাব এসিস্ট্যান্ড প্রকৌশলী জাকারিয়া আলম তালুকদার বলেন, আমি ওই কর্মস্থলে চার মাস দায়িত্ব পালন করেছি। তবে বক্স কালভার্টটির সাথেই গভীর গর্ত ছিল। আমি শুধু এপ্রোচটা দেখেছিলাম। সবটুকু কাজের তদারকি করেছিলেন তখনকার দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোকারম হোসেন। এ বিষয়ে মোকারম হোসেন এর সাথে জানতে চাইলে মুঠোফোন বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য নেওয়া যায়নি।