ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
আউশ মৌসুমে সরকারের বরাদ্ধকৃত বিনামূল্যে প্রান্তিক কৃষকদের জন্য প্রণোদনার সার বীজ যাচ্ছে ডিলারদের গোডাউনে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে উপজেলা কৃষি বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিধিদের সম্পৃক্ততায় অকৃষকরা তালিকাভূক্ত হওয়ায় কৃষক সার উত্তোলন করে কৃষি কর্মকর্তাদের সামনেই ডিলারদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। অভিযোগ উঠলেও বিতরনের ২য় দিন গত বৃহস্পতিবারও এমন ঘটনা ঘটলেও নেয়া হয়নি কোন পদক্ষেপ।
আউশ মৌসুমের জন্য সরকারিভাবে ৩ হাজার ছয়শত ৪০ জন সুবিধাভোগী কৃষকের প্রনোদনা দেয়ার জন্য উপজেলায় ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে খরিপ-১/২০২২-২৩ মৌসুমে উফশী আউশ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনা মূল্যে বীজ ও রসায়নিক সার বিতরণে বরাদ্ধ পায় উপজেলা কৃষি অফিস। ওই সমকল সুবিধাভোগী কৃষকের নামের তালিকা করেন স্থানীয় ইউপি মেম্বার, চেয়ারম্যান ও উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। সরকার ঘোষিত প্রণোদনা অনুযায়ী একেকজন কৃষক প্রতি বিঘা ধান চাষের জন্য ৫ কেজি উপশী বীজ, দেড় কেজি হাইব্রিড বীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার বরাদ্দ হয়। তা বিতরনের জন্য গত সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম উদ্বোধন করে উপজেলা কৃষি অফিস।
বিতরনের শুরু থেকেই কার্ডধারীরা সার বীজ উত্তোলন করেই উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোডাউনের সামনেই একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উত্তোলনকৃত সার বিক্রি করে দিচ্ছেন। আর এসব সার কিনে নিচ্ছেন ত্রিশাল বাজারের একতা ট্রেডার্সের মালিক ডিলার আনিসুজ্জামান। ভ্যানগাড়ি ভর্তি করে ওইসব সার বীজ ডিলারের গোডাউনে ঢুকছে। কালো বাজারির মাধ্যমে ডিলারের দোকানে সার চলে যাচ্ছে এমন ঘটনা জানাজানি হলে ত্রিশাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান ত্রিশাল পৌরশহরের ডিলার আনিসুজ্জামানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে দেড় টন সরকারি সার ও ৪২০ কেজি বীজ জব্দ করলেও ওই ডিলারের বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা।
বৃহস্পতিবার সার বীজ বিতরনের দ্বিতীয়দিনে সরেজমিনে দেখা যায়, কার্ডধারী কৃষকরা সার উত্তোলন করে স্থানীয় ডিলারদের ভাড়া করা ভ্যানে মালামাল তুলে দিয়ে ডিলারের দোকান থেকে টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। এসময় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা দাড়িয়ে থাকলেও কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সচেতন মহলের অভিযোগ সঠিকভাবে প্রান্তিক চাষীদের তালিকা করলে এমন ঘটনা ঘটতো না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, স্থানীয় ইউপি মেম্বার, চেয়ারম্যানদের সমন্নয়ে প্রকৃত কৃষককে বাদ দিয়ে তালিকা করা হয়। প্রকৃত কৃষকরা প্রনোদনার কার্ড না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
উপজেলার বৈলর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল বাতেন ২১০ শতাংশ জমি আউশ আবাদ করেন, ৮নং ওয়ার্ডের আবেদ আলী ৭ কাঠা, আংরার চড় গ্রামের মোহাম্মদ আলী ৮ কাঠা, পৌরসভার দরিরামপুর গ্রামের ফজলুল হক আট কাঠা, মেদারপাড়ের জয়নাল আবেদীন ২ একর, দরিরামপুরের জালাল উদ্দিন ১২ কাঠা, আব্দুল আজিজ তিন একর জমি, দুলাল ১২ কাঠা, পাচপাড়া গ্রামের আমানুল্লাহ এক একর জমি আবাদ করলেও কেউ কোন কৃষি কার্ড পায়নি। উপজেলার ১২ ইউনিয়নের অধিকাংশ প্রকৃত কৃষকরা প্রনোদনার কার্ড থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অসাধু চক্রের কারনে।
ডিলার আনিসুজ্জামান বলেন, প্রকৃত কৃষকরা তালিকাভূক্ত হননি। আর কার্ডধারীরা বিক্রি করে দিচ্ছেন বলেই আমি টাকা দিয়ে সার বীজ কিনে নিচ্ছি। কৃষি অফিসের লোকজনসহ কৃষক মনোনয়নের জন্য যারা জড়িত সব দোষ তাদের।
ত্রিশাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানিয়া রহমান জানান, তালিকা অনুযায়ী আমরা সার বীজ বিতরন করে থাকি। বিতরনের প্রথমদিন সার বীজ বিক্রির সময় হাতে নাতে আমরা আনিস ডিলারের দোকান থেকে অভিযান পরিচালনা করে দেড় টন সরকারি সার ও ৪২০ কেজি বীজ জব্দ করি। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কৃষকরা যদি সার বীজ উত্তোলন করে তা বিক্রি করে দেয় আমাদের কি করার আছে।
ইউএনও আক্তারুজ্জামান জানান, বিনামুল্যে বিতরনের সার বীজ এক ডিলারের গোডাউন থেকে জব্দ করার ঘটনা শুনেছি। কৃষি কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ওই ডিলারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রকৃত কৃষকরা যদি তালিকা বঞ্চিত হয়ে থাকে সেটাও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।