রোববার ভোর ৬টা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে চলবে গাড়ি

প্রকাশিত: ৮:৫৩ অপরাহ্ণ, জুন ২৫, ২০২২

স্বজন ডেস্ক : সরকারের নির্দেশনা অনুসারে, রোববার (২৬ জুন) ভোর ৬টা থেকে নির্ধারিত টোল দিয়ে সেতু পার হতে পারবে যানবাহনগুলো। এ সেতুর মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চল থেকে খুব সহজেই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াত করা যাবে।

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পদ্মা সেতুতে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালানো যাবে না। এ সেতুর ওপর যে কোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলা বা হাঁটা সম্পূর্ণ নিষেধ।

এছাড়া তিন চাকার যানবাহন (রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, অটোরিকশা ইত্যাদি), পায়ে হেঁটে, সাইকেল বা নন-মটোরাইজড গাড়িযোগে সেতু পারাপার হওয়া যাবে না। গাড়ির বডির চেয়ে বেশি চওড়া এবং ৫ দশমিক ৭ মিটার উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতার মালামালসহ যানবাহন সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার করা যাবে না। সেতুর ওপরে কোনো ধরনের ময়লাও ফেলা যাবে না।

সরকার নির্ধারিত টোল হার অনুযায়ী, পদ্মা সেতু পারাপারে মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা, কার ও জিপে ৭৫০ টাকা, পিকআপে এক হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে এক হাজার ৩০০ টাকা টোল পরিশোধ করতে হবে।

বাসের ক্ষেত্রে ছোট বাস (৩১ আসন) এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাস (৩২ আসন বা এর বেশি) দুই হাজার টাকা, বড় বাস (থ্রি-এক্সেল) প্রতি দুই হাজার ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।

এছাড়া ছোট ট্রাককে (পাঁচ টন পর্যন্ত) এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (পাঁচ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ আট টন পর্যন্ত) দুই হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ ১১ টন) দুই হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাকে (থ্রি-এক্সেল পর্যন্ত) পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রেইলার (ফোর-এক্সেল পর্যন্ত) ছয় হাজার টাকা। আর ট্রেইলার (ফোর-এক্সেলের অধিক) ছয় হাজারের সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা যুক্ত হবে।

শনিবার (২৫ জুন) বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে নির্ধারিত টোল দেন। ১১টা ৫৮ মিনিটে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। দুপুর ১২টা ৬ মিনিটে সেতু দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর জাজিরার অভিমুখে রওনা করে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে বাংলাবাজার ঘাটের জনসভাস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষণ দেন।

২০০১ সালের ৪ জুলাই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৪ সালের নভেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুই স্তরবিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এ সেতুর ওপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে।
পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮ দশমিক ১০ মিটার। পদ্মা সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরি, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন-ভাতা ইত্যাদি।

বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেয় সরকার। এক শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরের মধ্যে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার স্বপ্নের কাঠামো নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।

এদিকে ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে পদ্মা সেতুর দুইপ্রান্ত সহ বর্ণিল আয়োজনে সারা দেশে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উদযাপন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে জেলা ও বিভাগীয় শহরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। সবার মাঝে ছিল বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা।

শনিবার (২৫ জুন) বেলা ১১টা ৫৯ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বহু কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর ফলক উন্মোচন করে ‌‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন প্রধানমন্ত্রী। এ অনুষ্ঠান সারা দেশে একযোগে প্রচার করা হয়।

সমাবেশে যোগ দেওয়ার আগে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওপারে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ১২টা ৩৬ মিনিটে সেখানে বানানো অপর একটি ফলক মঞ্চে যান তিনি। সেখানে দ্বিতীয় দফায় মোনাজাতে অংশ নেন।

জাজিরা প্রান্তে সেতুর মোড়ক উন্মোচনের সময় প্রধানমন্ত্রীর একপাশে তার অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং অপর পাশে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

এর আগে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সমাবেশস্থলে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় সাড়ে তিন হাজার অতিথিকে মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেতুর টোল প্লাজার কিছুটা আগে এক পাশে অস্থায়ী প্যান্ডেলে আয়োজন করা হয় সমাবেশের। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সমাবেশে ভাষণ শেষে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম, সিলমোহর ও ১০০ টাকার স্মারক নোট উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর গাড়িবহর নিয়ে ১১টা ৫৫ মিনিটে টোল প্লাজায় টোল প্রদান করেন তিনি। ১১টা ৫০ মিনিটে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১১টা ৫৯ মিনিটে সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমেই খুললো পদ্মা সেতুর দুয়ার।