সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে নিজেকে প্রস্তুত করুন – মো. আবুল কালাম আজাদ

প্রকাশিত: ১০:০৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৬, ২০২১

নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দিতে কার না ভাল লাগে। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে চাহিদার কিংবা আকর্ষণের একটি কাজ হচ্ছে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। ব্যবসা কিংবা চাকরি যেকোনো জায়গাতেই মানুষ চায় নিজেকে কিছুটা আলাদাভাবে উপস্থাপন করতে। তাইতো বর্তমান সময়ের তরুণ-তরুণীদের আকর্ষণের একটি জায়গা হচ্ছে নিজেকে উদ্যোক্তার আসনে দেখা। যদি আপনি উদ্যোক্তা হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা করে থাকেন তবে আপনার নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে নানা দিক দিয়ে। আপনাকে চৌকস হতে হবে স্বীয় চিন্তা-কর্ম এবং পারিপার্শ্বিক সকল দিকে।
লক্ষ্য স্থির করা :
জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে লক্ষ্য স্থির করা। আপনি যখন কোন কাজ মন-প্রাণ দিয়ে করতে চাইবেন দেখবেন নানা ভাবে সমস্যা মাথাচারা দিয়ে উঠছে। আপনার হয়ে যাওয়া কাজটাও শেষ মুহূর্তে আর করা হয়ে উঠছেনা। এই পর্যায়ে বেশিরভাগ নতুন উদ্যোক্তাদের মনে এটাই আসে যে আমাকে দিয়ে আর হবেনা। আমি এই কাজটি শেষ করতে পারবোনা। এটি আপনার মনোবল ভেঙ্গে দেয় যাতে করে আপনি আর আপনার লক্ষে পৌঁছাতে পারেননা। তাই সবার আগে লক্ষ্য স্থির করুন।

নেটওয়ার্ক তৈরি :
একজন নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি অনেক কিছুই জানেননা। সেই দিক থেকে নতুন কিছু করতে গেলে আপনাকে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হবে। তাই যত পারুন আপনার আশেপাশের মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করুন। এটি আপনাকে নানা তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে। সেইসাথে আপনার জন্য এই যোগাযোগ আপনার জন্য কাজ করবে নেটওয়ার্ক হিসেবে।

এ্যাডভারটাইজিং :
আপনি আপনার কাজকে যত সুন্দর করে মানুষের মাঝে তুলে ধরবেন তার কদর ততো বাড়বে। আর সেই েেত্র মোবাইল এ্যাডভারটাইজিং হতে পারে আপনার প্রথম স্টেপ। সেজন্য আপনার আশেপাশের বন্ধু কিংবা আত্নীয়দের নির্বাচন করুন। এরপর তাদের আপনার কাজ মেইল কিংবা নানাভাবে প্রদর্শন করুন। যখন দেখবেন সাড়া পাচ্ছেন তখন বড় ধরণের পদপে নিতে পারেন।

উদ্ভাবন থেকে বিরত না থাকা :
মনে রাখুন আপনি একজন উদ্যোক্তা। আপনার কাজ হচ্ছে নতুন নতুন জিনিস আবিস্কার করা। নতুনকে সবার মাঝে তুলে ধরা। পিছনে হাজার মানুষ হাজারটা কথা বলবেই। তাকে নিয়ে বসে থাকলে আপনি কখনো উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারবেননা। তাই সবসময় নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন।

কঠোর পরিশ্রমী :
উদ্যোক্তা হতে হলে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। তিল তিল করে গড়ে তোলা বিজনেস এক সময় বিশাল শিল্প সাম্রাজ্য করে সাজাতে সততা আর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। এরপর আপনাকে হতে হবে ডায়নামিক এবং চৌকস। কেননা উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে আপনাকে পিওন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রধানের সঙ্গে পর্যন্ত কথা বলতে হবে। অধিক পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকতে হবে। কোন কারণে কাজে সফল না হতে পারলে হাল ছেড়ে দিলে চলবেনা। অধিক মনোবল নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

আত্নবিশ্বাস :
প্রত্যেক মানুষের কিছু গুণ থাকে। সফল উদ্যোক্তার প্রধান গুণ হচ্ছে আত্নবিশ্বাস। যার আত্নবিশ্বাস যত বেশি তার সাফল্য ততো বেশি। যদিও এটি অর্জন করা কঠিন। সফল উদ্যোক্তা তার আশেপাশের আত্নবিশ্বাসী লোকদের মধ্যে অন্যতম। আপনাকে হতে হবে স্থির ও দূরদৃষ্টি স¤পন্ন, যা আত্নবিশ্বাসকে আরও বৃদ্ধি করে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবে।

উদ্দেশ্য :
সব কাজেই একটা উদ্দেশ্য থাকে, উদ্দেশ্যহীন কাজ ভালো কিছু বয়ে আনতে পারেনা। বিশ্বাস করতে হবে আপনি ব্যতিক্রমী কিছু করতে সম।

মনে মনে দৃশ্যকল্প অংকন :
মনে মনে আপনার ব্যবসার দৃশ্যকল্প আঁকুন। কীভাবে সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে দেখুন। সেখানে নানা রকম দৃশ্যপট উপস্থাপিত হবে। সবকিছু সুচারুভাবে পরীা-নিরীা করুন। একজন সফল উদ্যোক্তা তার বাস্তব জীবনে দৃশ্যপটের যথাযথ প্রয়োগে সফলতা অর্জনে সম হন।

ধৈর্যশীলতা :
কঠোর ধৈর্যশীলতার মাধ্যমে ব্যবসার পথকে অধিকতর মসৃণ করতে হবে। ব্যবসায় সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতা নামক শব্দটিতে ধৈর্যশীলতার মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হবে। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যবসার সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে সফল উদ্যোক্তা হতে অবশ্যই ধৈর্যশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

কখনোই ‘না’ বলা যাবেনা :
সফল উদ্যোক্তারা জানেন যে, তাদের পে কী করা সম্ভব এবং কী করা সম্ভব নয়। তাই অন্যরা যখন কাজের ভয়ে না বলবেন বা পারবেননা বলে কাজ পাওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করেন সফল ব্যক্তিরা তাদের সবকিছু বিবেচনা করেই সুযোগকে হ্যাঁ বলেন। এর ফলে কায়েন্টদের কাছে অন্য সবার থেকে সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন আলাদা। অনেক সময় কায়েন্টরা অন্য কাউকে না খুঁজে সরাসরি সফল ব্যবসায়ীদের আরও কাজ করার এবং আরও আয় করার সুযোগ দিয়ে থাকেন।
মূলধন :
সর্বোপরি উদ্যোগের শুরুতেই নিশ্চিত করতে হবে প্রয়োজনীয় মূলধন। বিশেষ করে প্রথম বছরের সব খরচ এবং বিনিয়োগের পুরো টাকাই থাকা চাই আপনার হাতে। পরের বছরগুলোর জন্য হয়তো তারল্য নির্ধারণ করে আপনি ব্যবসার আয় থেকেই সব খরচ নির্বাহ করতে পারবেন। এছাড়া বাংলাদেশের অনেক সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক, এনজিও তৈরি আছে আপনাকে সাহায্যের জন্য। এর মধ্যে অনেক বছর ধরে এসএমই বা ুদ্র ঋণের মাধ্যমে শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য কিছু বেসরকারি ব্যাংক বিভিন্ন রকম সাহায্য করে আসছে।

লেখক :
মো. আবুল কালাম আজাদ
(বাংলাদেশ টেলিভিশন বিতার্কিক)
চেয়ারম্যান, ময়মনসিংহ ডিবেটিং সোসাইটি।
ব্যাংক কর্মকর্তা ও গণমাধ্যমকর্মী।